‘অনেক স্বপ্ন ছিল আমার ছেলেকে নিয়ে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা সব কেড়ে নিল। শোকেরও তো একটা ধরন আছে, এটা কোন ধরনের শোক। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী, এ ভার বইবার ক্ষমতা আমার নেই।’
আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইনের বাবা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে তৌফিক সবার বড়।
এদিকে দেলোয়ার হোসেন নোয়াখালী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী। তিনি পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা। তার ছেলে তৌফিক হোসাইন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় নিহত হন তৌফিকসহ দুই শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, নিহত তৌফিকের সহপাঠীসহ শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এদিকে তৌফিক হোসাইনের বাবা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার আর কিছু রইল না। তৌফিক আমার কাছে আইবো না। আমার বাবারে আমি মাটির নিচে রেখে আসছি। আল্লাহ আপনি তারে দেইখা রাইখেন। আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া কইরেন। যার যায় সেই বুঝে কত কষ্ট। আল্লাহ আপনি তৌফিকরে দেইখা রাইখেন।
এদিকে তৌফিক হোসাইনের মৃত্যুতে শোকে ভারী হয়ে আছে নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা। পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনদের অনেকেই তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই কান্না থামছে না তাদের। সন্তানের কথা বলে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা তামিমা তারান্নুর। স্কুলপড়ুয়া ছোট বোন ভাইয়ের জন্য কাঁদছে অঝোরে। কিছুই বুঝছে না পাঁচ বছরের ছোট ভাইও
এ সময় তৌফিকের স্কুল (নোয়াখালী জিলা স্কুল) জীবনের সহপাঠী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা রোজার ঈদের কয়েক দিন আগে একসঙ্গে জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে ইফতার করেছি। ঈদের পরের দিনও তৌফিকের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। মাত্র কয়েক দিনের মাথায় প্রিয় বন্ধুটি নেই— এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না।
এদিকে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, তিন ভাই-বোনের মধ্যে তৌফিক সবার বড় ছিল। তাকে ঘিরে তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। তৌফিকের এক বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট ভাইয়ের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। জানাজায় স্মৃতিচারণে সবাই আহাজারি করেছে। কবর দেওয়ার পরও পুরো এলাকার সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। এমন মৃত্যু সত্যিই কারও কাম্য নয়।
এর আগে গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন ও একজন আহত হন।
এদিকে হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও একই বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসেন। শান্ত সাহা নরসিংদী জেলা সদরের কাজল সাহার ছেলে এবং তৌফিক হোসেন নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আহত জাকারিয়া হিমু পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।