এবার ব্যবসায় লোকসানের কারণে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন মো. আরিফুল ইসলাম (২৭)। এক পর্যায়ে একটি কিডনি বিক্রির চেষ্টাও করেন। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় লিফলেটও লাগান কিডনি বিক্রির। কিন্তু ব্যর্থ হন। এরমাঝে পাওনাদাররা তার বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। তাদের চাপে ও ভয়ে আরিফুল ইসলাম ৩ থেকে ৪ মাস ধরে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় আত্নগোপন করে থাকেন।
এরপর টাকা পরিশোধ করা যাবে এমন পরিকল্পনায় এটিএম বুথ লুট করার চেষ্টা করেন। এসময় পাশবিক কায়দায় নির্মমভাবে বৃদ্ধ বুথের নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। আজ সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এদিকে ঈদুল ফিতরের আগের দিন, গত ১০ এপ্রিল রাজধানীর শাহজাদপুর মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী আরিফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও বুথ ভাঙার বিভিন্ন মালামাল উদ্ধারসহ আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ।
হারুন অর রশীদ বলেন, ঈদের আগের দিন, গত ১০ এপ্রিল ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামিরা গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর প্রগতি স্মরনীর মাইশা চৌধুরী টাওয়ারে অবস্থিত মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড হাসান মাহমুদকে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহতের ভাই মাহফুজুর রহমান রুমেল নিহত হাসান মাহমুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন।
এ মামলার মূল ঘটনা উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ, সিআইডি এবং অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ডিবি গুলশান জোনাল টিম মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালীন তথ্য প্রযুক্তি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, আসামির ব্যবহৃত মোবাইল ও পরিহিত পোশাক এবং গোয়েন্দা সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শনাক্তের পর মো. আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে গ্রেফতার আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন অফিস ও বাসা বাড়ির আসবাবপত্র পরিবহনের কাজ করতেন। ২/৩ বছর আগে এ ব্যবসার পাশাপাশি ইট, বালি ও পাথর সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কারণে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ হয়ে যায়। একপর্যায়ে কিডনি বিক্রির চেষ্টা করেন, মিরপুর এলাকায় লিফলেটও ছাড়েন। কিন্তু কিডনি আর বিক্রি করতে পারেননি। এদিকে, পাওয়ানাদাররা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।
তিনি বলেন, পাওনাদারদের চাপে ও ভয়ে গত ৩/৪ মাস ধরে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজধানীর মিরপুর-১সহ বিভিন্ন জায়গায় আত্নগোপনে থেকে টাকা পরিশোধ করা যাবে এমন চিন্তা ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে থাকেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় এটিএম বুথ লুট করার উদ্দেশ্যে পাশবিক কায়দায় নির্মমভাবে বুথের নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এ সময় ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে ব্যাংক/এটিম বুথ ডাকাতির দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুন করে হলেও এটিম বুথের টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেন গ্রেফতার আরিফুল ইসলাম। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট থেকে হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, মিরপুর পল্লবী মিল্লাত ক্যাম্প মোড় থেকে চাপাতি, সাবল, চাকু ও মিরপুরপুর স্টেডিয়ামের ফুটপাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটি জার্সি ক্রয় করেন। এরপর নিরিবিলি এলাকায় এমন এটিম বুথের অবস্থান খুঁজতে থাকেন।
তিনি বলেন, গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর, ৩০/বি, মাইশা চৌধুরী টাওয়ার, মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথ নিরিবিলি মনে হওয়ায় এই এটিএম বুথ লুটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী, গত ১০ এপ্রিল পর্য্যবেক্ষণ করে আনুমানিক ৫টা ১৩ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করাকালীন এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী হাসান মাহমুদের বাধার সম্মুখীন হওয়ায় তাকে চাপাতি দিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল ও চাপাতি দিয়ে এটিম বুথ ভাঙার চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে প্রায় ১০/১২ মিনিট চেষ্টা করেও এটিএম বুথ ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল, চাপাতি ও ব্যাগ রেখে একটি ছোট চাকু নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর ভোর ৫টা ৩১ মিনিটের দিকে বাসে উঠে মিরপুরের দিকে চলে যান। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আরিফুল ইসলামই এ ঘটনায় জড়িত। তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে।