ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি, বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা। যেহেতু দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের এক তারিখে এর সমাপ্তি ঘটানো হয়, তাই এর নাম ঈদুল ফিতর। আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে মুসলমানদের ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। এ দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ। দিনটিতে আল্লাহর নেয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করা অবশ্যপালনীয়। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান শেষে আসে ঈদুল ফিতর। যারা রমজানে রোজা রেখেছেন তাদের জন্যই ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। যারা মাসটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন, আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাদের নিয়ে গর্ব করেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশে রওয়ানা হন, আল্লাহ তায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদান পূর্ণ মাত্রায় দেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিলাম। আর তোমাদের পাপরাশিকে সওয়াবে পরিণত করলাম। (বায়হাকি)
ঈদের দিনের সুন্নত-
গোসল করা : ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করা সুন্নত। এ বিষয়ে হাদিসে রয়েছে, হজরত ইবনে উমার (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (সুনানে বায়হাকি ৫৯২০)।
সুন্দর জামাকাপড় পরিধান করা : গোসল করার পর সাধ্যমতো উত্তম জামাকাপড় পরিধান করা উচিত। কেননা, আল্লাহ তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে চান। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা তার বান্দার ওপর তার প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। (সহিহ আল জামে ১৮৮৭)।
ঈদের নামাজের আগে কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া : ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার পর কিছু খাওয়া সুন্নত। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের আগে কিছু খেতেন না। (তিরমিজি শরিফ : ৫৪৫)।
হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া’। (তিরমিজি শরিফ : ৫৩৩)।
এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা : এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া আর অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নত। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, নবি করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন। (সহিহ বুখারি : ৯৮৬)।
নামাজ শেষে খুতবা শোনা : ঈদের নামাজ শেষে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবি করিম (সা.)-এর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন, আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (আবু দাউদ শরিফ : ১১৫৭)।
সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা : রমজান মাসে রোজার যে ত্রুটি হয়েছে তা পূরণ করতে অভাবগ্রস্ত আর গরিবদের যে খাদ্যসামগ্রী দান করা হয় তাকেই সাদাকাতুল ফিতর বলে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি : ১৫০৩)।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় ঈদগাহে সর্বস্তরের মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি তার পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকাল সাড়ে ৮টায় মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের প্রধান ঈদের নামাজে অংশ নেবেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রপতি সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।