এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনার সম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবছে সরকার। রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বৈঠক শেষে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমরা আগামী কোরবানি সামনে রেখে তাদের (ব্রাজিলকে) ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি, যদি সস্তা হয় তাহলে জীবন্ত গরু আনার ব্যবস্থা করা যায় কি না। আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে পারি।
তিনি বলেন, ব্রাজিলের পক্ষ থেকে অ্যানিমেল প্রোটিনটা ফোকাসে ছিল। বিশেষ করে ব্রাজিল অত্যন্ত কম দামে মাংস এক্সপোর্ট করতে পারে। এ বিষয়ে তারা কথা বলেছে। সাধারণত এটা ছিল প্রাথমিক আলোচনা। এটি শুরু মাত্র। এদিকে ব্রাজিল ৪ থেকে ৫ ডলারের মধ্যে হালাল গরুর মাংস সরবরাহ করার প্রস্তাব করেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দামের বিষয়গুলো তো পরে, আমরা আগে আমদানি অ্যালাউ করি, তখন দাম ও হেলথ সার্টিফিকেশন নিয়ে আলাপ হবে। আমাদের এখনো অ্যানিমেল প্রোটিন আমদানি নিষিদ্ধ। আমরা পোল্ট্রি এবং মাংস ইম্পোর্ট করি না। আমরা স্টাডি করে নিই, তারপর দেখা যাবে কোন দামে এটি আসতে পারে। যেটি তারা বলেছে মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি, সসেজ নিয়েও। আমরা বলছি, শুধু বাংলাদেশের মার্কেট না, বাংলাদেশে এটিকে প্রসেস করে এশিয়ান মার্কেটে এন্টার করার বিষয়টি তাদের বলেছি।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ব্রাজিল ট্রেড এবং কমার্সকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ইনিশিয়াল ডিসকাশন হলো। তারা একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছে। সেই টিমের সঙ্গে আমাদের এফবিসিসিআইয়ের টিমের কাল মতবিনিময় হবে। সেখানে আরও দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূলত আমাদের দেশের যে সম্ভবনা, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের দেশ থেকে গার্মেন্টসের ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেসটা চাই। ওদের থেকে যে কটনটা আমরা নিয়ে আসছি সেই কটনের তৈরি গার্মেন্টসে যেন আমরা ডিউটি ফ্রি বা কোটা ফ্রি অ্যাকসেস পাই। আমাদের ফার্মাসিটিক্যাল মার্কেট যেন সহজেই ওই দেশে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সেখানে এক্সপোর্ট করতে পারে। সেই সঙ্গে জুট, লেদার গুডস কীভাবে মার্কেট অ্যাকসেস হয় সেগুলো নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল।
তিনি বলেন, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে আমাদের এই জয়েন্ট ডায়ালগটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। জুলাইয়ে তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পারব, যেখানে একটি মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ বা ফিজিবিলিটি নিয়ে কাজ করে কোন কোন এরিয়ায় কীভাবে আমাদের আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারি।
বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে ওষুধ রপ্তানির প্রশ্নে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ওষুধ নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই, তাদের কিছু লাইসেন্সিং প্রসেস আছে। আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রেশন আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কথা বলে তারা যেন এগুলো ফলো করে। ইন্টারন্যাশনাল যে প্রটোকল আছে তাহলে তাদের কোনো অসুবিধা নেই।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা কমানো নিয়ে ব্রাজিলের অবস্থান জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারাও ইন্টারনাল ইন্ডাস্ট্রিকে প্রটেকশন দেয়। গার্মেন্টস কিন্তু তাদের রেস্ট্রিকটেড। তারা শুধু বাংলাদেশ ও চায়না থেকে নেয়। বাকিটা তারা লোকালি করার চেষ্টা করে। তারা যে কথা দিয়েছে সেটি হলো শুধু ব্রাজিল নয়, আমাদের গার্মেন্টসের এক্সপোর্টটা পুরো রিজনের জন্য যেন হয়। আমাদের টার্গেট শুধু ব্রাজিল নয়, দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোতেও ব্রাজিলকে কেন্দ্র করে এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহায়তা করবে।