এবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের পর এক তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তিন যুবক এবং সহায়তাকারী নারী পলাতক রয়েছেন। মোহাম্মদপুরের নবীনগরে চারতলার এক ফ্ল্যাটে টানা ২৫ দিন আটক রাখার এই ঘটনায় এক নারীর সহায়তা করা এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
রাজধানীর মধ্যেই একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে যৌন নির্যাতনের ঘটনা জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর থেকে জানতে পেরে গত শনিবার ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই ঘটনায় ২৩ বছর বয়সী তরুণী তিন যুবক ও এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিদের শনাক্তের পর তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে ওই তরুণী নির্যাতনের যে ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন তা অনেকটাই মুখে বলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ওই তিন যুবক প্রায় ২৫ দিন তাকে আটকে রেখে ধর্ষণের পাশাপাশি পাশবিক যৌন নির্যাতন চালায়।
সেই তিন যুবক হলেন- সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯)। আসামি নারীর নাম সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)। যিনি এক প্রবাসীর স্ত্রী। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, নবীনগরে সালমার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গত ৫ মার্চ থেকে তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই তিন যুবকের ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তাও করেন তিনি।
এদিকে মামলায় বলা হয়, বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী বড় বোনের বাসায় থাকছিলেন। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তার মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। এক পর্যায়ে বোনের বাসা ছেড়ে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন তিনি। পরে সালমার মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তরুণীর।
একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবীনগরের ওই বাসায় গত ৩ ফ্রেব্রুয়ারি প্রথম ধর্ষণ করেন সান বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়। সর্বশেষ ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি একইভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার পর বিয়ের জন্য চাপ দিলে সান পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের আশ্বাস দেন। বিয়ে না করলে থানায় গিয়ে মামলা করার কথা বললে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন যুবক।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ মার্চ দুপুরে দুই বন্ধু হিমেল ও রকিকে নিয়ে ওই বাসায় এসে সান তরুণীকে সারপ্রাইজ দেবে বলে চোখ বন্ধ করতে বলে। সালমা এসময় খাবার আনার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যান। সানের কথায় চোখ বন্ধ করলে তারা তিনজন মিলে তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেন। পরে সালমার কথায় হিমেলকে পাহারায় রেখে অন্যরা শেকল আনার জন্য বাইরে চলে যান। এসময় একা পেয়ে হিমেল তাকে ধর্ষণ করেন।
সেই দিন থেকে শেকল দিয়ে হাত ও পা বেঁধে রাখা হয় দাবি করে ওই তরুণী মামলায় অভিযোগ করেন, একদিন পর ৭ মার্চ রকি বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করেন। খাবার ও রাথরুমে যাওয়ার সময় বাসায় থাকা সালমা শুধু পায়ের শেকল খুলে দিতেন। পরদিন সানের ধর্ষণের চিত্র ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন তিনি।
এরপর থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ওই তিনজন তরুণীকে ধর্ষণ করেন এবং একে অপরের ভিডিও করেন। এসময় সালমা তাদের সহায়তা করেন। গত ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে জানালা দিয়ে চিৎকার করে স্থানীয় এক ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী। পরে ওই ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এগিয়ে আসে।