গত সোমবার সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে আইটেম পরীক্ষা চলছিল। আর সেই পরীক্ষার হলেই শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের করা গুলিতে আহত শিক্ষার্থী হন আরাফাত আমিন তমাল।
তমাল অষ্টম ব্যাচের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় এরই মধ্যে শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হয়েছে দুটি মামলা। গ্রেপ্তারের হওয়া ওই শিক্ষকের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের হদিস পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ডা. মো. রায়হান শরীফ ফৌজদারি অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্ত হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এদিকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিকেলে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় শিক্ষক রায়হান শরীফ তাঁর সামনের টেবিলে বেশ কয়েকটি বার্মিজ চাকু ও গুলিসহ পিস্তল রাখেন।
এরপর শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করেন, বাড়িতে কে কে প্রাণী পোষে। তখন তমাল তাঁকে জানান, তাঁর বাড়িতে পাখি আছে। বিষয়টি জানার পর পরই রায়হান শরীফ টেবিলে রাখা পিস্তলটি তুলে ধরে বলেন–এটা আমার শখের পোষা পাখি। এক পর্যায়ে ঠাট্টার ছলে তমালের দিকে পিস্তল তাক করে গুলি করেন রায়হান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গুলিটি পকেটে থাকা মোবাইল ফোনে লাগার কারণে বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তমাল। তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিনের করা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তমালকে গুলি করার পর শিক্ষক রায়হান শরীফ অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস তাহলে সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব।’ এরপর জরুরি সেবা নম্বরে ৯৯৯ কল করে প্রাণে রক্ষা পান সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক রায়হান শরীফ সব সময় অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে আসতেন। টেবিলে অস্ত্র রেখে লেকচার দিতেন। শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতেন। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হতেন এবং শিক্ষার্থীদের অহেতুক বকাবকি করতেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, শরীফের অবৈধ অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার পর অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে পুলিশ তাঁর কাছ থেকে তালোয়ারসহ দুটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। দুটি পিস্তল তমাল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কিনেছেন। আর ৮১টি গুলি কিনেছেন ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায়।
এদিকে পুলিশের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের আগস্ট এবং নভেম্বরে অবৈধভাবে অস্ত্র দুটি সংগ্রহ করেন শরীফ। এরপর থেকেই তিনি সঙ্গে পিস্তল রাখতেন। এবং সুযোগ পেলেই তিনি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবাইকে ভয় দেখাতেন। বিষয়টি জানতেন কলেজ প্রশাসন কিন্তু আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে জানায়নি। তাঁর এই উগ্রতার কারণে তিন চার বছর আগে তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান।