এবার বাংলাদেশি যুবকের প্রেমের টানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক ভারতীয় নারী। খোয়ালেন সঙ্গে আনা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। যার হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছেন সেই প্রেমিকসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হয়েছেন ফটিকছড়ি থানা পুলিশের। প্রতারক প্রেমিকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে করেছেন মামলা। ওই মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ভারতীয় ওই নারীর নাম রহিমা শেখ (৪৯)। তিনি মুম্বাইয়ের মহারাষ্ট্র থানার শাসরিনগর এলাকার মো. ইউনুচ শেখের মেয়ে।
এদিকে ফটিকছড়ি থানার ওসি কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার বলেছেন, ‘সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল পেয়ে উপজেলার জাফরনগর ইউনিয়নের একটি বসতঘর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি প্রেমের টানে নাছির উদ্দিন নামে এক যুবকের হাত ধরে বাংলাদেশে অবৈধভাবে এসেছেন। যার হাত ধরে এসেছেন তারাই তাকে নির্যাতন করছে- এমন অভিযোগ করেছেন তিনি। মামলার পর এর মধ্যে আমরা দুজনকে গ্রেফতার করেছি। অন্য আসামি বিদেশে পলাতক। ভুক্তভোগীকে আদালতের নির্দেশে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে অবস্থিত সরকারি সেফহোমে রাখা হয়েছে।’
এদিকে মামলারা আসামিরা হলেন- ফটিকছড়ি উপজেলার জাফরনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রফিক সওদাগরের বাড়ির আবুল কালামের ছেলে নাছির উদ্দিন (৩৪), তার মা রওশন আরা বেগম (৫৮) ও তার ভাই নাজিম উদ্দিন (৩০)। এর মধ্যে নাজিম বর্তমানে বিদেশে আছেন। মামলায় ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিকাল ৫টা থেকে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টা পর্যন্ত।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নাছির উদ্দিন আমার সঙ্গে ভারতের স্থানীয় এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতো এবং আমার স্বামীর পরিচিত ছিল। সেই সূত্রে পরিচিত ছিল। স্বামী তিন বছর আগে মারা যায়। এরপর সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলে, বাংলাদেশে এলে আমরা দুজন মিলে অনেক সুখের সংসার করবো। ভারতে আমার বাড়িঘর বিক্রি, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যাই। নগদ ২১ লাখ টাকা ও আমার ব্যবহৃত বিভিন্ন স্বর্ণালংকারসহ ফুঁসলিয়ে গত ৮ জানুয়ারি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এরপর কুমিল্লা থেকে বাসে ফটিকছড়িতে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত একটি রুমে আটকে রাখে। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে। ভারতের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ দেয়। পরে বিষয়টি ভারতে থাকা মেয়কে জানালে সে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করার পরামর্শ দেয়। সেখানে কল করলে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ আড়াই লাখ টাকা নগদ, সাত ভরি নয় আনা বিভিন্ন সোয়া এবং ১৫ ভরি রুপার নূপুর উদ্ধার করে।
এদিকে মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ফটিকছড়ি থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ‘প্রেমের টানে ফটিকছড়ির যুবক নাছির উদ্দিনের সঙ্গে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধপথে বাংলাদেশে আসেন। আসার সময় বেশ কিছু টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন। জাতীয় জরুরি সেবায় কল পেয়ে উদ্ধার করি। তার মামলায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান হয়েছে। ভুক্তভোগী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাসকে জানিয়েছি। বর্তমানে তিনি সরকারি সেফহোমে আছেন। সব প্রক্রিয়া শেষে ভারতে ফিরে যাবেন।