, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


সারাবছরই অবহেলিতই থাকে জাককানইবি'র শহীদ মিনার

  • আপলোড সময় : ১৯-০২-২০২৪ ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০২-২০২৪ ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন
সারাবছরই অবহেলিতই থাকে জাককানইবি'র শহীদ মিনার
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ‘ফেব্রুয়ারি’ বাঙালির গর্বের মাস, ভাষার মাস। বায়ান্নর এ মাসেই ভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেক তরুণ তাজা প্রাণ। একটি ভাষা, একটি জাতির বড় পরিচয়, যা আমরা পেয়েছি শহীদদের জীবন উৎসর্গের মধ্যদিয়ে। রক্তের সিঁড়ি বেয়ে রচিত হয়েছিল ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনের এক অমোঘ ইতিহাস। এই মাস এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে চলে নানা ধরনের আয়োজন, পরিষ্কার করা হয় শহিদ মিনারগুলো। অথচ বছরের অন্যান্য সময় অবহেলায়, অপরিচ্ছন্নতায় নষ্ট হয় শহিদ মিনারের পরিবেশ ও গাম্ভীর্য। এই চিত্র দেখা গেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের ক্ষেত্রেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের কোল ঘেঁষেই রয়েছে শহীদ মিনার। 

দুইদিন আগেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহীদ মিনার পরিষ্কার থাকার কথা থাকলেও সবচেয়ে অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। এর কিছু কিছু অংশে ভেঙে গেছে। পাশের গাছগুলো থেকে শুকনো পাতা পড়ে মিনারের চারপাশ অপরিষ্কার হয়ে আছে। স্টিলের রেলিংগুলো মরিচা পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন কোনো যত্ন না নেওয়ায় মিনারের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। এছাড়াও মিনারের গায়ে জমে আছে শেওলার আস্তরণ। শহীদ মিনারটির সুরক্ষায় নেই কোন সীমানা প্রাচীর। ফলে কুকুর, বিড়াল থেকে জুতা পায়ে উঠে পরে দর্শনার্থীরাও। ভাষার মাস উপলক্ষেও কোনরকমের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে।

আর একদিন পরেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছর জুড়ে অবহেলায় পড়ে থাকা জরাজীর্ণ শহীদ মিনারটি সেচ্ছায় পরিষ্কার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিফাত হারুন আব্দুল্লাহ'র নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী।

পরিষ্কার কার্যক্রমে নেতৃত্বদানকারী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগ নেতা সিফাত বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহীদ মিনার টি ভাষার মাস উপলক্ষে যেনো একটু হলেও যত্নে থাকে সেইজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের উচিৎ খুবই গুরুত্বের সাথে শহীদ মিনারটি পরিচর্যা করা। শুধু ভাষার মাস না বছরের প্রতিটি দিন যেনো পরম যত্নে থাকে আমাদের বীর সন্তানদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনারটি।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও শহীদ মিনারের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। ভালো কোনো জায়গায় নতুন করে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবী জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন বলেন, "বিভিন্ন স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখি শহীদ মিনার হয় খোলামেলা এবং ক্যাম্পাসের কেন্দ্রবিশিষ্ট জায়গায়। কিন্তু আমি বুঝি না যে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা মিনার ক্যাম্পাসের এক কোনায় পরে রয়েছে, তাও আবার বিভিন্ন প্রকার ময়লা দিয়ে ভর্তি। তাই আমি মনে করি শহীদ মিনার সুন্দর একটি জায়গায় স্থানান্তর করা হোক এবং যথাযথ মর্যাদা এবং সম্মান দেওয়া হোক।"

লজ্জা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান খান শুভ বলেন, “আজ সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের ওদিকে গেছিলাম। শহিদ মিনারের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ল আবর্জনা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কাঁচাবাজারের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। মিনারকে এমন অপরিচ্ছন্ন যত্নহীন অবস্থায় ফেলে রাখা ভাষা শহিদদের অপমানের সামিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমার কাছে খুবই লজ্জার।”

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাওলা প্রিন্সকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তা-বোধের চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলন ও শহিদ মিনার আমাদের জীবন-মন-সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে-কারণে শুধু একটি মাসের একটি দিনে শহিদ মিনার গুরুত্ব পাবে, তা মোটেও কাম্য নয়। কোনো শহিদ মিনার পরিত্যক্ত হবে, অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকবে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

শহীদ মিনারের অযত্ন অবহেলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যতগুলো প্রজেক্ট চলে সেগুলোতে শহীদ মিনারের কোন বাজেট নাই তবে আমাদের এটা নিয়ে অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। সারাদেশেই তো শহীদ মিনারের কার্যক্রম ভাষার মাস কেন্দ্রিক। আমাদের এখানেও তাই করা হয়। তবে শহীদ মিনার তো একটা পবিত্র জায়গা। এটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বা এটার পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের না। ওখানে যারা যাবে তাদেরও এটা মাথায় রাখা উচিত।”
সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া