এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় এ বছর প্রথম স্থান অধিকারী তানজিম মুনতাকা সর্বা বলেছেন, ‘এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় তিনি তাঁর অনুভূতি জানান। তানজিম মুনতাকা বলেন, ‘কখনও কল্পনা করিনি এমন কিছু একটা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমারা আব্বু-আম্মু আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে আমাকে আব্বু আম্মু কখনও বকা দেননি। সব সময় বলেছেন, একদিন খারাপ হয়েছে তাই কি? আগামীতে তুমি ভালো করবে। তাদের এই ছোট ছোট কথা আমাকে সামনে এগিয়ে নিতে অনেক সহযোগিতা করেছে।’
এ সময় তানজিম মুনতাকা বলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবনে আব্বু-আম্মু সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এমন কোনো বিষয় নেই, যেটা নিয়ে আমি বাবা-মায়ের সহযোগিতা পাইনি। মেডিকেলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক হতাশায় থাকতাম, কিন্তু আব্বু-আম্মু এমনভাবে পাশে থাকতেন, সব মন খারাপই তখন ভুলেই যেতাম। বাবা মায়ের সহযোগিতা না পেলে কখনই এই অবস্থায় আসা সম্ভব ছিল না।
এমন সফলতার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার সফলতার পেছনে শিক্ষকদের অবদানের কথা শেষ করা যাবে না। চিকিৎসক হওয়ার জন্য শিক্ষকরাই বেশি উৎসাহ দিতেন। তাদের জন্যই আমি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে আমি প্রথম চিকিৎসক হতে চলেছি। তার আগে কেউই চিকিৎসক ছিল না। চিকিৎসক হতে চাওয়ার এটাও অন্যতম একটি কারণ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমবিবিএস শেষ হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। কিছুদিন ধরে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা জেগেছে। যদিও এর আগে অন্যভাবনা ছিল। যারা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এসএসসির প্রস্তুুতি পুরোপুরি নিতে হবে। এতে পরবর্তীতে অনেক বেশি সহজ হবে। আরেকটা বিষয় হলো- পড়াশোনা নিয়মিত করতে হবে। একইসঙ্গে একটা সঠিক দিকনির্দেশনাও খুব জরুরি। আর প্রস্তুতি চলাকালীন বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। আমি অনেক বেশি পরীক্ষা দিয়েছি, যার কারণেই আমি মনে হয় এগিয়ে আছি।
তিনি জানান, আমি আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকি। পরিবারের কাছে থেকেই মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। মেডিকেল পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমার ফেসবুক বন্ধ রেখেছিলাম। পড়ার সময় মোবাইল মায়ের কাছে রেখে আসতাম। পড়া শেষ হলে প্রয়োজন হলে আবার ফোন মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আসতাম।
এ সময় তানজিম মুনতাকার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, মেয়ের এমন সফলতায় আমি খুবই আনন্দিত। তার পড়াশোনা দেখে মনে হতো সে অনেক ভালো করবে। তবে দেশসেরা হয়ে যাবে এটা কল্পনাও করিনি। এদিকে মা জিনিয়া শারমিন বলেন, আমার তো এখনও স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমার সন্তান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।
এদিকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় তানজিম মুনতাকা সর্বা পেয়েছেন সর্বোচ্চ নম্বর। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৯২ দশমিক ৫ নম্বর। তানজিম মুনতাকা ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন।