সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি পাঁচ বছরের শিশু আয়ান। প্রায় চার দিন পার হলেও তার জ্ঞান ফেরাতে পারছে না ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের ধারণা তাদের সন্তান হয়তো আর বেঁচে নেই। কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের কোনো ধরনের কথা বলছেন না। পরিবারের অভিযোগ, ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পাঁচ বছরের শিশুকে ফুল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অচেতন করে দুই ঘণ্টা ক্লাস নেয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে।
আয়ানের বাবার নাম শামীম আহমেদ। তিনি কনকর্ড গ্রুপের সেলস বিভাগের কর্মকর্তা।
শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, শিশুটিকে ফুল অ্যানেসথিসিয়া দেওয়া হলেও তা তাদের জানানো হয়নি। এছাড়া গত চার দিন ধরে নানা মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সবশেষ আজও তারা কিছুই জানায়নি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পরিবারকে না জানিয়ে খাতনার জন্য ফুল অ্যানেসথিসিয়া দিয়ে শিশু আয়ানকে অজ্ঞান করেন চিকিৎসক। বুধবার সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল বোর্ড বসায়। সেখানে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না তাও জানানো হয়নি তাদের।
ভু্ক্তভোগী পরিবার আরও জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত চার দিন ধরে তাদের নানাভাবে আশা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কথা মতো শিশুটির স্বজনরা এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন।
শিশুটির একজন স্বজন বলেন, তারা অনুমতি ছাড়াই পাঁচ বছরের বাচ্চাকে ফুল অ্যানেসথিসিয়া দিয়ে সুন্নতে খাতনা (মুসলমানি) করিয়েছে। কিন্তু সেদিন থেকে বাচ্চাটির আর সেন্স ফেরেনি। প্রথমে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এরপর শিশুটিকে পিআইসিইউতে লাইভ সাপোর্টে রেখে দেন তারা। তারা আমাদের সঙ্গে চার দিন ধরে প্রতারণা করছে।
ভুক্তভোগী আয়ানের বাবার এক সহকর্মী বলেন, আয়ানের সুন্নতে খাতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজটির ইন্টার্ন ৪০ থেকে ৫০ জনকে ঢোকানো হয়েছিল। তারা শিশুটিকে পরীক্ষার উপাদান ও অপারেশন শেখার অংশ হিসেবে কাজটি করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও তারা এখন সেটা স্বীকার করছে না। ওই সময় শিশুটির বাবা অপারেশন থিয়েটার থেকে তাকে বের করতে দেরি হওয়ায় এক পর্যায় ঢুকে পড়েন এবং দেখতে পান, তার ছেলের নাকে মুখে তারা নল লাগিয়ে শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। তখনই আমরা মনে করেছি, আয়ানকে তারা ভুল কিছু করেছে। পরে তাকে গুলশান শাখায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে যেহেতু হাসপাতালটির সুন্নতে খাতনা সাতারকুল শাখায় করা হয়, সেই কারণে সেটির অভিযোগ দিতে হবে ভাটারা থানায়। তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, শিশু আয়ান এখনো চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। সেই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তার চিকিৎসা চলছে। এছাড়া শিশুটির বাবারও তাকে দেখেছে, তার পালস রয়েছে। ফলে আমরা একজন জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা করতে পারি না।