জনপ্রিয় ফুটবল বিশ্বে দশ নাম্বার জার্সির যেন মাহাত্ম্যটাই আলাদা। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে তার ১০ নম্বর জার্সিতে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। সেই একই সময়ে ইউরোপের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে ১০ নম্বর জার্সিতে ফুটবল দুনিয়াতে আলোড়ন তুলেছিলেন ডেনিস ল। এই দুজনের দেখানো পথ ধরেই ইউরোপে শুরু হয় দশ নম্বরের উন্মাদনা।
তবে পেলের কারণে সেটা চলে যায় অন্য এক উচ্চতায়। এরপর থেকে যুগে যুগে কিংবদন্তি মানেই যেন দশ নম্বর। ইতালির রবার্তো ব্যাজ্জিও বা ফ্রান্সিসকো টট্টি, ব্রাজিলের রোনালদিনহো-কাকা, ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি আর জিনেদিন জিদান, আর্জেন্টিনায় মারিও কেম্পেস এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনা নিজেদের দেশ বা ক্লাবের প্রতিনিধি হয়েছেন ১০ নম্বর জার্সিতেই।
এদিকে পেলের পর দশের মাহাত্ম্য অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালে তার জাদুকরী পারফরম্যান্সে ভর করেই বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। ক্লাব পর্যায়েও ম্যারাডোনা ছিলেন অনন্য। তার অবসরের পর সম্মান দেখিয়ে ১০ নম্বর জার্সি তুলে রাখতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।
কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপে অ্যারিয়েল ওর্তেগা আর্জেন্টিনার ১০ নাম্বার জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন। এএফএ প্রেসিডেন্ট হুলিও গ্রান্দোনার ইচ্ছাতে বাদ সাধে ফিফা। বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সরাসরি জানিয়ে দেয় নিয়ম অনুযায়ী, শীর্ষ টুর্নামেন্টে সব জাতীয় দলকে অবশ্যই ১ থেকে ২৩ এর মধ্যে জার্সি নম্বর ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে ম্যারাডোনা-ওর্তেগার সেই জার্সির মালিক পরে হয়েছেন লিওনেল মেসি। রোজারিও থেকে উঠে আসা এই ফুটবলারকে তর্কসাপেক্ষে ইতিহাসের সেরা ফুটবলার বলে থাকেন অনেকেই। ৩৬ বছর পর তার কল্যাণেই বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। মেসি নিজেও ব্যক্তিগত অর্জনে ছাড়িয়ে গিয়েছেন সব কিংবদন্তিকেই। এবার তার সম্মানে ১০ নম্বর জার্সিকে তুলে রাখতে চায় আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
আর্জেন্টিনার বর্তমান অধিনায়ক অবসর নিলেই তার জার্সিকে অবসরে পাঠানো হবে, এমনটাই জানিয়েছেন এএফএ-এর প্রধান ক্লদিও তাপিয়া। আর্জেন্টাইন এক সংবাদমাধ্যমকে তাপিয়া বলেন, 'মেসি যেদিন জাতীয় দল থেকে অবসর নেবে, আমরা আর কাউকে এরপর ১০ নম্বর জার্সি পরার অনুমতি দেবো না। তার সম্মানে এই ১০ নম্বর জার্সিও আজীবনের জন্য অবসরে চলে যাবে। অন্তত এটুকু আমরা তার জন্য করতেই পারি। '
এদিকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখন পর্যন্ত ১৮০ ম্যাচ খেলে ১০৬টি গোল করেছেন মেসি। তার অধীনেই ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকা এবং ৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষ করে বিশ্বকাপের শিরোপা নিশ্চিত করেছে আলবিসেলেস্তেরা। মেসি নিজে ৭ বার ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছেন। জয় করেছেন ৮টি ব্যালন ডি’ অর। তবে তাপিয়ার এমন সিদ্ধান্ত ফিফার সবুজ সংকেত পাবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।