, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ , ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


আ. লীগের সেই নেতাকে সভাপতি অব্যাহতি দিলেও সম্পাদকের চিঠিতে বহাল

  • আপলোড সময় : ২৭-১২-২০২৩ ০১:৪২:৫৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-১২-২০২৩ ০১:৪২:৫৬ অপরাহ্ন
আ. লীগের সেই নেতাকে সভাপতি অব্যাহতি দিলেও সম্পাদকের চিঠিতে বহাল ফাইল ছবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ বক্তব্য দেওয়ায় মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অব্যাহতি দিয়েছে। এর কয়েক ঘন্টা পরই সাধারণ সম্পাদক পৃথক  চিঠিতে স্ব পদে বহাল করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর সই করা পৃথক চিঠির মাধ্যমে সিরাজুলকে প্রথমে অব্যাহতি ও পরে স্বপদে বহাল করা হয়।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হীরুর পক্ষে কাজ করলেও সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা দুই প্রার্থীর হয়ে কাজ করা নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামানের সভায় সিরাজুল ইসলাম হুমকি প্রদান করেন যে, ‘নৌকাওয়ালারা পালানোর জন্য জায়গা পাবে না’ যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়। যা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমন অবস্থায় তাকে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের কারণে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। আর স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়।

এর কয়েক ঘণ্টা পরই সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে জানানো হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ও সমর্থনের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো বিধিনিষেধ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিধায় সকল নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সমর্থন তাদের নিজস্ব অধিকার। এ বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বিধায় সিরাজুল ইসলামকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সভাপতির একক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা গ্রহণযোগ্য বা কার্যকর নয়। আপনি স্বপদে বহাল আছেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কথা বলছেন। সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য নৌকা, নেত্রী (শেখ হাসিনা) ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য হুমকি। এজন্য তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, এককভাবে কোনো মিটিং না ডেকে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া সভাপতির অধিকারে নেই। তিনি আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি। এ ছাড়া কোনো মিটিংও ডাকেননি। তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অব্যাহতি দিতে পারেন না। নেত্রী এবার নির্বাচন সফল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রার্থী হওয়ার ও তাদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কাউকে অব্যাহতি দিতে পারি না।

এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর দুপুরে মাধবদী পৌরসভা মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুলের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরুর (বীর প্রতীক) লোকজনকে উদ্দেশ্য করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। কাল থেকে নৌকাওয়ালারা পালাইবার জন্য জায়গা পাবে না।’ এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘নৌকা বলি না, আমরা হীরুর নৌকা বলি, হীরু.. হীরু..। হীরুর লোকেরা পলাইবার জায়গা ইনশাল্লাহ পাবে না। ৭ তারিখে যে জাগরণ সৃষ্টি হবে এই নরসিংদীতে, এই জাগরণের পরিণতিতে কামরুল ভাই (স্বতন্ত্র প্রার্থী) বিপুল ভোটে জয়ী হবে।’

মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের এমন হুমকিমূলক বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয় পক্ষ-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মালিক মোহাম্মদ রাজিব নামের এক ব্যক্তি রিটার্নিং অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন ৭ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন। নোটিশ পেয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে জবাব দেন সিরাজুল ইসলাম।
সর্বশেষ সংবাদ
সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলায় ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১০ কোটি টাকা

সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলায় ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১০ কোটি টাকা